বর্ধমানের কালনা ঐতিহ্য বাহক ১০৮ মন্দিরের খোঁজে ।

 


  বর্ধমানের মহারাজা তেজেন্দ্র বাহাদুর 1809 সালে ১০৯ টি শিব মন্দির নির্মাণ করেছিলেন। 
সাধারণের কাছে এটি ১০৮ শিবমন্দির নামে পরিচিত হলেও এখানে মন্দিরের সংখ্যা ১০৯টি। যেকোনোও জপের মালায় যেমন ১০৮টা বীজ গাঁথা থাকে এবং সাক্ষী হিসাবে মাঝখানে সামান্য বড় একটা বীজ থাকে, এখানে মন্দির নির্মাণের সময় সেই নিয়ম নীতিই মানা হয়েছিল।
পাখির চোখে যেমন
                                                                                                                              
ভিতরে 34 টি বৃত্তাকার শিবমন্দির এবং বাইরের দিকে 74 টি বৃত্তাকার শিবমন্দির। প্রত্যেকটি মন্দির আটচালা এবং দেওয়াল গুলোতে সুন্দর কারুকার্য  অঙ্কিত এবং রঙগুলো প্রাকৃতিক উপদানের।বাইরের বৃত্তে সাদা (সদাশিবের প্রতীক) ও কালোরঙের (রুদ্র শিবের প্রতীক) শিবলিঙ্গসহ ৬৬ টি এবং ভিতরের বৃত্তে রয়েছে ৪২ টি মন্দির।  বাইরের মন্দির গুলো পৃথিবীর প্রতীক বলে মানা হয়।তবে ১০৯-তম শিবমন্দিরটি অবস্থিত বৃত্তের বাইরে। একটি বিশেষ জ্যামিতিক ছন্দে দারুণ সুন্দরভাবে গাঁথা । সমস্ত মন্দিরগুলিই রাজবাড়ির চৌহদ্দির মধ্যে নির্মিত। প্রত্যেকটি মন্দিরের ছাদই গম্বুজাকৃতি।

 
বিশাল জায়গা জুরে এই রাজবাড়ি। তবে রাজবাড়ীর কিছুটা অংশ বাদ দিয়ে বাকী জায়গা ভারত সরকারের ভারতীয় পূরাতত্ব দফতরের অধীনে। বেশ কয়েকটি সৌধ এই রাজবাড়ীর চত্বরে অবস্থিত।
 
অ :- ( প্রতাপেশ্বর মন্দির ) এই সৌধ 1849 সালে মহারাজা প্রতাপচন্দ্রের স্ত্রী তৈরী করেছিলেন। এই একচালা মন্দিরের   ভিতরে অর্থাৎ গর্ভগৃহে শিবলিঙ্গ পুজিত হয়। এই মন্দিরের চারিদিকে আছে পোড়মাটির টেরাকোটার অপূর্ব কাজ।দেওয়ালে খোদাই করা আছে দুর্গা, রাম রাবণ, শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু এবং অন্যান্য বহু দেবদেবীর মুর্তি দেখতে পাওয়া যায়। 
 
লালজী মন্দির
আ:- (লালজী মন্দির) রাসমন্চ থেকে একটু এগিয়ে গেলেই নজরে আসবে নয়চূড়া বিশিষ্ট লালজী মন্দির। 1740 সালে বর্ধমানের মহারাজা কৃত্তিচাদের মা ব্রজকিশোরী দেবী এই মন্দির তৈরী করেছেন।মন্দিরের সন্মুখ ভাগে আছে 12 টি স্তম্ভের সাথে একটি নাটমন্ডপ। মন্দিরের দেওয়ালে পোড়ামাটির টেরাকোটার কাজ। এখনের বিভিন্ন দেব দেবীর মূর্তি খোদাই করা আছে। লালজী গোবিন্দের আরেক নাম। এখানে লালজী এবং রাধার পূজো হয়।

 

ই :-  (রাসমন্চ) প্রতাপেশ্বর মন্দিরের পাশেই ছাদবিহীন রাসমন্চ দেখতে পাওয়া যাবে। রাসপূর্ণিমার সময় এখানে রাধাকৃষ্ণের মুর্তি স্থাপন করে পুজো করা হয়।
 
ঈ :- ( গিরিগোবর্ধন মন্দির )লালজী মন্দিরের পাশেই বেশ রঙিন এই মন্দির। 1769 সালে এই মন্দির তৈরী হয়। কালো শ্লেলট্ পাথর ব্যবহৃত হয়েছে। মন্দিরের দেওয়ালে বিভিন্ন দেবদেবী, মুণি ঋষির এবং পশু পাখির মুর্তি খোদাই করা আছে।
 
 
উ:-(কৃষ্ণচন্দ্রজীর মন্দির ) 1751 সালে মহারাজা তিলকচাদের মা লক্ষীদেবী এই মন্দির প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। মন্দিরের পুরো কাজ সমাপ্ত হয় 6 বছর পর। এই মন্দিরের উচ্চতা 65 ফুট। এই মন্দির তিনতলা বিশিষ্ট এবং পচিশ টি চূড়া। মন্দিরের মন্দিরের তিনটি প্রবেশ পথ খিলান বিশিষ্ট। দেওয়ালে ফুলকারী এবং টেরাকোটার কাজ। রামায়ণ এবং মহাভারতের অনেক চরিত্র দেওয়ালে খোদাই করা। মন্দিরের গর্ভগৃহে রাধাকৃষ্ণের মুর্তি।
 
 


ঊ :- লালজী মন্দির থেকে বেরিয়ে একটু এগিয়ে বা দিকে দেখা যাবে আটচালা বিশিষ্ট পাঁচটি শিব মন্দির। এই মন্দির গুলো আনুমানিক 19 শতকের মাঝামাঝি তৈরী হয়েছে।
পাঁচটি শিব মন্দির বা  পঞ্চরত্ন মন্দির ।

 
ঋ:- (বিজয়বৈদ্যনাথ মন্দির) লালজী মন্দিরের পাশেই আছে আটচালা বিশিষ্ট এই মন্দির। বেশ উচু ভিতের উপর এই শিবমন্দির। মন্দিরের সামনের দিকে অনেক ধরণের পোড়ামাটির কাজ।


সিদ্ধেশ্বরী কালী মন্দির
এই বার চলুন  রাজবাড়ী থেকে প্রায় 2 কিলোমিটার দুরে অবস্থিত এই মন্দির। প্রধান পুরোহিতের বক্তব্য অনুযায়ী 688 সালে ঋষি অম্বরীশ এই মন্দির স্থাপন করেন। দেওয়ালে পোড়ামাটির কাজ এবং বৈষ্ণব এবং শাক্ত ধর্মের মিলিত ছবি। তবে দেওয়াল এমনভাবে রঙ করা হয়েছে যে এই মন্দিরের ঐতিহ্য অনেকটা ম্লান হয়েছে।এই মন্দিরের নামে কালনার নামকরণ অম্বিকা কালনা। আগে নাকি এখানে নরবলি হতো। মন্দিরের লাগোয়া চারটি আটচালা শিব মন্দির আছে।
 
 
 
 
তেতুল গাছের
 
  মহাপ্রভু শ্রীচৈতন্য নিজের গুরুদেবকে দেখতে আসার সময় এই অমালীতলায় একটি তেতুল গাছের নিচে বিশ্রাম নিয়েছিলেন। তেতুল গাছটির বয়স আনুমানিক 550 বছর। গাছটির 
নিচে মহাপ্রভুর পদযুগলের চিন্থে পুজো করা হয়।
 
মহাপ্রভুর পদযুগল

 
 
 
 বাংলাদেশ থেকে ভবেন্দ্রকুমার এসে এখানে বসবাসের জন্য একটি আশ্রম তৈরী করেছিলেন। ভবা পাগলা অনেক লোকসংগীত রচনা করেছিলেন।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

1 মন্তব্যসমূহ