শিব নিবাস পাবাখালি,মাজদিয়া নদিয়া:
বিস্তারিত - ভিডিও দেখতে, ক্লিক লিংক -
স্বাধীনতার প্রাক্কালে অবিভক্ত নদীয়ার মহকুমা ছিল পাঁচটি।
1.কৃষ্ণনগর সদর মহকুমা,
2. মেহেরপুর,
3. কুষ্টিয়া,
4. চুয়াডাঙা
5. রানাঘাট।
১৯৪৭ সালের ১২ আগস্ট রাতে রেডিওতে সংবাদ এলো ১৪/১৫ আগস্ট ১৯৪৭ মাঝরাতে যথারীতি দ্বি-খন্ডিত স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে ঘোষণা করা হবে।
১৬ মে ১৯৪৬ বৃটিশ পার্লামেন্ট–এর সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ১০ জুলাই ১৯৪৬ গঠিত হল ভারতের সংবিধান সভা (The Constituent Assembly of India ) । প্রথম সভা বসল ৯ ডিসেম্বর ১৯৪৬ । ৩ জুন ১৯৪৭ বৃটিশ পার্লামেন্ট ভারতের দেশভাগ মেনে নিল মুসলিম লীগ ও কংগ্রেস । ১৮ জুলাই ১৯৪৭ বৃটিশ পার্লামেন্ট ১৯৩৫ সালের Government of India Act, 1935 কে সংশোধন করে Indian Independence Act, 1947 পাশ করল।এই Indian Independence Act, 1947 এর বলে ১৫ আগস্ট ১৯৪৭ দিনটিকে ভারত ও 14 আগস্ট ১৯৪৭ দিন পাকিস্থান দুটি পৃথক দেশ গঠনের জন্য সুনির্দিষ্ট করে দিল ।
( ১৯০৫ সালে যা ছিল ‘বঙ্গভঙ্গ’এর মহড়া এই Act এ তা কারযকরী করা হল ‘পূর্ববঙ্গ’ ও ‘পশ্চিমবঙ্গ’ নামে দুটি প্রদেশ তৈরির মধ্য দিয়ে । ১৯০৫ সালে আঁকা মানচিত্র অনুযায়ী দিনাজপুর,মালদহ, মুর্শিদাবাদ,নদীয়া,যশোহর এবং বনগাঁ থানাকে ‘পূর্ববঙ্গ’এর মধ্যে ধরা হয় । )
৩০ জুন ১৯৪৭ ঘোষনা(Ref. No.D50/7/47R) স্যার Cyril Radcliffe চেয়ারম্যান করে পাঁচজনের বেঙ্গল বাউন্ডারি কমিশন গঠন করা হয়। Cyril Radcliffe ছাড়া কমিশনের বাকি চারজন বিচারপতি ছিলেন জাস্টিস বিজনকুমার মুখোপাধ্যায়, সিসিr বিশ্বাস, আবু সালেহ মহম্মদ আক্রম এবং এস এ রহমান।
৩০ জুন থেকে ১৪ আগস্ট ১৯৪৭ মাত্র ৪৫ দিন হলেও প্রকৃত পক্ষে ১৮ জুলাই ১৯৪৭ থেকে ১২ আগস্ট ১৯৪৭ মোট ২৫ দিন কমিশন হাতে পায় । আর সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য ১৬ থেকে ১৯ এবং ২১ থেকে ২৪ জুলাই ১৯৪৭ মাত্র ৮ দিন পাওয়া যায়। ১২ আগস্ট ১৯৪৭ Radcliffe রিপোর্ট পেশ করেন। ।
১২ আগস্ট ১৯৪৭ থেকে ১৪/১৫ আগস্ট ১৯৪৭ স্বাধীনতা ঘোষনা মাঝের মাত্র দুদিনে মানুষ Radcliffe রিপোর্টের সঙ্গে পেশ করা নতুন মানচিত্র সম্পর্কে ওয়াকিবহাল ছিলেন না ।১৯০৫ সালের আঁকা মানচিত্রকে ব্যবহার করে সুকৌশলে প্রচারে মুসলিম লীগ ময়দানে নেমে পড়ে।১৫ আগস্ট সকালে মুসলিম লীগের হৈ চৈ মিছিল মিটিং করে পাকিস্থানের পতাকা উত্তোলনে সাধারণ মানুষের সঙ্গে কংগ্রেস, হিন্দু মহাসভা, নিউ বেঙ্গল অ্যাসোসিয়েশনের নেতারাও বিভ্রান্ত হন ।
এটি হিন্দুপ্রধান জায়গা এটা ভারতে থাকার কথা ছিল৷ কিন্তু কার্যক্ষেত্রে তা হয়নি। সেই সময় নদিয়ার রানী ছিলেন জ্যোতির্ময়ীদেবী৷ তিনি আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়েন, মুর্শিদাবাদের রানি স্বর্ণময়ীদেবী সহ ড. শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়, কাবু লাহিড়ী, প্রমথ নাথ শুকুল / রানাঘাট , মালদহ, দিনাজপুর , বনগাঁ অনেক নেতৃত্ব গণ আন্দোলন শুরু করতে লাগলেন। নানা স্তরের সামাজিক ব্যক্তিত্ব মাউন্ট ব্যাটন সহ ব্রিটিশ প্রশাসকদের কাছে বনগাঁ সহ নদীয়া, মুর্শিদাবাদ, মালদহ, দিনাজপুর জেলার ভারতভুক্তির জোরালো দাবি তুলে ধরেন। ১৯৪৭ সালের ১৫ আগস্ট চক্রবর্তী রাজা গোপালচারী গভর্নর অব বেঙ্গল পদে আসীন হন। তাঁর কাছে দরবার, কলকাতা থেকে দিল্লি প্রশাসনিক ট্ৰেলিগ্রাম আদান প্রদানের পর ১৯৪৭ সালের ১৭ আগস্ট নোটিফিকেশন জারি করে বনগাঁ সহ চারটি জেলার অবস্থান পরিষ্কার করে দেওয়া হয়। ১৭ অগস্ট সন্ধ্যায় বেতার সংবাদে সংবাদ এলো ১৮ তারিক ভারত ভুক্তিকরণ হবে.
নোটিফিকেশন নং 58G.A. Dated 17.08.1947.u/s. 7(1) of Cr.pc.,1898 বলে আগেকার সব নোটিফিকেশনকে বাতিল ঘোষণার মাধ্যমে নদীয়াকে দ্বি-খন্ডিত করে ‘নবদ্বীপ’ ও ‘কুষ্টিয়া’ জেলা গঠন করা হয় ।‘নবদ্বীপ’ জেলার অধীনে কৃষ্ণনগর ও রাণাঘাট মহকুমা অন্তর্ভুক্ত হয় । একই দিনে নোটিফিকেশন নং 61 G.A. Dated 17.08.1947 u/s. 4(1)(s) of Cr.P.C.1898 অনুযায়ী মেহেরপুর মহকুমার করিমপুর ও দৌলতপুর থানা এলাকাকে চিহ্নিত করে মাথাভাঙ্গা নদীর মাঝ বরাবর সীমানা নির্ধারণ করা হয়। ১৯০৫ সালের মানচিত্রের মত নয় ।১৯০৫ থেকে ১৯৪৭ সাল ৪২ বছরে ১৯০৫ সালের মানচিত্রের কথা সবার জানা ছিল ।
Radcliffe এর ‘রায় পরিষ্কার বুঝা যায়নি বলে এই বিভ্রান্তি’ কথাটি যথার্থ নয় । ‘মুসলিমলীগ রণকৌশলে’ যেমন তিনদিন ‘পাকিস্থান ধোঁয়াশা’ ছিল তেমনি নিজেদের ব্যর্থতাকে ঢাকতে এবং সম্প্রীতির বাতাবরণ বজায় রাখতে ‘কংগ্রেসী রণকৌশলে’ Radcliffe এর ঘাড়ে দোষ চাপিয়ে ‘রায় না বুঝতে পারা’র কথা প্রচার করা হয় । মুসলিম লিগ ১৪ অগাস্ট ১৯৪৭ সালে কৃষ্ণনগর পাবলিক লাইব্রেরির মাঠে পাকিস্তানের পতাকা উত্তোলন । ১৭ অগস্ট সন্ধ্যায় বেতার সংবাদে সংবাদ এলো ভারত ভুক্তিকরণ হবে, ১৮ অগাস্ট কৃষ্ণনগর পাবলিক লাইব্রেরির মাঠে পাকিস্তানের পতাকা নামিয়ে ভারতবর্ষের পতাকা তোলা হলো।…তার পর রাজ্ বাড়ি রাজ্ পতাকা নামিয়ে গান স্যালুট এর মাধ্যমে ভারতীয় জাতীয় পতাকা তোলা হয়।
দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর দেশ স্বাধীন হয় তারসাথে নদীয়াও। এখনও সেই দিনের কথা স্মরণ করে নদীয়ার মাজদিয়া সংলগ্ন শিবনিবাসে এই ১৮ই আগষ্ট দিনটি ১৯৯১ সাল থেকে মহা সমারোহে পালিত হয়ে আসছে । বয়স্ক মানুষের মিষ্টি মুখ , মহিলাদের নৌকা বাইচ ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে দিন টি বরং করেন মাজদিয়া মানুষ
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য ১৯৪৮ সালে ২৩ ফেব্রুয়ারি ‘নবদ্বীপ’ জেলার নাম পরিবর্তন করে আবার ‘নদীয়া’ রাখা হয়,(নং545 G.A Dated 23.02.1948. u/s.7(2) of Cr.P.C.1898).এবং ‘নদীয়া’ থানার নাম বদলে আবার ‘নবদ্বীপ’ থানা রাখা হয় (নং546 G.A Dated 23.02.1948. u/s.7(1) of Cr.P.C.1898).।
বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করা আছে। লিংক নিচে।আজকে প্রথম খুললাম , আপনাদের দেখবার উৎসাহ থাকলে, লেখার পাশাপাশি ভিডিও তৈরি করবো আপনাদের জানবার জন্য। আমার অজানা তথ্য জানতে খুবই আগ্রহ। গ্রাম আমার প্রিয়। প্রথম ও নতুন ত্রুটি মার্জনা করবেন। https://youtu.be/gf6cq5dezgE
0 মন্তব্যসমূহ