জায়গাটি হলো পাশের রাজ্য উড়িষ্যার, 'কেওনঝাড়'। বর্তমানে এটি অনেকের কাছেই পরিচিত, তবে অনেকের কাছে এখনও অজানা। কলকাতা থেকে খুব একটা দূরেও নয়।কেওনঝাড়ের দূরত্ব মাত্র ৩৫০ কিলোমিটার। কেওনঝাড় উড়িষ্যার 'কেন্দুজঝাড় 'জেলায় অবস্থিত। চারদিকে পাহাড় দিয়ে ঘেরা , এই কেওনঝাড়ে বাস করেন কিছু আদিবাসী ও সহজ-সরল সাধারণ মানুষ।
চলুন, এবার 'কেওনঝাড়' ট্যুরের সমস্ত খুঁটিনাটি তুলে ধরি এই ব্লগে। অল্প কথায় বিস্তৃতভাবে সব প্রশ্নের উত্তর পাবেন।
কেওনঝাড় পৌঁছাবেন
এবার আসি, কিভাবে আপনি কেওনঝাড় পৌঁছাবেন। আপনি চাইলে দুইভাবে পৌঁছাতে পারেন—রেলযাত্রা কিংবা সড়কপথে। ট্রেনে আসার জন্য তিনটি বিকল্প পথ আছে, আপনার সুবিধামতো যেকোনো একটি বেছে নেবেন।
প্রথমত, হাওড়া থেকে ট্রেনে চেন্নাই লাইনে উড়িষ্যার জাজপুর-কেওনঝাড় রোড স্টেশনে নামতে পারেন। তারপর এখান থেকে গাড়িতে ১২০ কিলোমিটার দূরে কেওনঝাড়ে পৌঁছানো যাবে।
দ্বিতীয় আপনি যা করতে পারেন, তা হলো হাওড়া থেকে ট্রেনে ‘খুরদা রোড স্টেশন’ পর্যন্ত গিয়ে।সেখানে থেকে পুনরায় ট্রেনে করে কেন্দুঝাড়গড় স্টেশনে যেতে হবে, যা কেওনঝাড়ের নিকটবর্তী রেলস্টেশন। এতে কিছুটা বেশি সময় লাগবে, কারণ এখানে ট্রেন পরিবর্তন করতে হচ্ছে।
তৃতীয়ত, হাওড়া থেকে সকালে একমাত্র বারবিলগামী ট্রেন, বারবিল জনশতাব্দী এক্সপ্রেসে যাত্রা করতে পারেন। 'বারবিল' থেকে 'কেওনঝাড়' এর দূরত্ব মাত্র ৮০ কিমি। বেশিরভাগ পর্যটক এই পথেই যান। বারবিল স্টেশনে নেমে ,আপনি গাড়ি রিজার্ভ করে অথবা বাসে করেও কেওনঝাড় পৌঁছাতে পারবেন।
নিচে একটি বুকিং টেবিল যোগ করা হলো, যেখানে গুগল ম্যাপও দেখতে পাবেন, শুধুমাত্র পাঠকদের সুবিধার্থে।
কলকাতা থেকে কেওনঝাড় যাওয়ার রুট ম্যাপ
স্টেশন | ট্রেন লিঙ্ক | দূরত্ব (কিমি) | গন্তব্য লিঙ্ক |
---|---|---|---|
হাওড়া → জাজপুর-কেওনঝাড় রোড স্টেশন | টিকিট বুকিং | 267 কিমি | ম্যাপ দেখুন |
হাওড়া → খুরদা রোড স্টেশন | টিকিট বুকিং | 436 কিমি | ম্যাপ দেখুন |
খুরদা রোড → কেন্দুঝাড়গড় স্টেশন | টিকিট বুকিং | 234 কিমি | ম্যাপ দেখুন |
হাওড়া → বারবিল স্টেশন | টিকিট বুকিং | 398 কিমি | ম্যাপ দেখুন |
বারবিল → কেওনঝাড় | ট্যাক্সি বুকিং | 80 কিমি | ম্যাপ দেখুন |
কোন সময়ে কেওনঝাড় আসবেন:প্রথমে বলে রাখি 'কেওনঝাড়' সারাবছর আসার মতো জায়গা নয়। এখানে আসার সেরা সময় হলো বর্ষাকালে, যদি আপনি, কেওনঝাড়ের প্রকৃত সৌন্দর্য দেখতে চান। সবুজ প্রকৃতি ও ঝর্ণার জল, এ দুটিই কেওনঝাড়ের প্রধান USP। এগুলো দেখার জন্য আপনাকে অবশ্যই বর্ষাকালে আসতে হবে, বিশেষ করে আগস্ট, সেপ্টেম্বর, অক্টোবর ও নভেম্বরের মাঝামাঝি পর্যন্ত এখানে জল থাকে।
শীতকালে এখানে খুবই মনোরম পরিবেশ বিরাজ করে।তাই অনেক পর্যটক শীতকালে এখানে আসেন। বাকি সময়ে এখানে আসার জন্য আমি আপনাদের উৎসাহিত করবো না।সঠিক তথ্য দেব।
কেওনঝাড়ের দর্শনীয় স্থান: এখানে দেখার মতো প্রচুর জায়গা রয়েছে। তবে এসব স্থানগুলো দূরে দূরে এবং বিভিন্ন দিকে অবস্থিত। তাই আপনারা অল্প সময়ের মধ্যে যেসব জায়গা গুলো কভার করতে পারবেন, আমি সেই স্থানগুলোই তুলে ধরছি।
কেওনঝাড়ের দর্শনীয় স্থান
ক্রমিক নম্বর | দর্শনীয় স্থান |
---|---|
১ | মা তারিনী মন্দির
|
২ | গুন্ডিচাঘাই ফলস
|
৩ | ভীম কুন্ড
|
৪ | সীতা বিঞ্জি, রক এডিক্ট, রাবন ছায়া
|
৫ | কাঞ্ঝারি ড্যাম
|
৬ | সানা ঘাঘরা ফলস্
|
৭ | বড়া ঘাঘরা ফলস্
|
৮ | বড়া ঘাঘরা ড্যাম
|
৯ | খন্ডধর ফলস্
|
১০ | হান্ডিভাঙ্গা ফলস্
|
১১ | গও নাসিকা / বৈতরণী নদীর উৎসস্থল (যদি সময় পান)
|
১২ | মুর্গ মহাদেব ফলস (যদি সময় পান)
|
লাস্ট দুই জায়গা যাবার জন্য ড্রাইভারের সাথে কথা বলে নেবেন, রিকোয়েস্ট করবেন যাতে করিয়ে দেয়, তাহলে খুবই ভালো হবে।
প্রথম দিন : যদি বন্দেভারতে আসেন, তবে স্টেশন থেকে দ্রুত বেরিয়ে আসুন। গাড়ি আগের থেকে বুক করে রাখুন। দুদিনের জন্য কিছু ড্রাইভারের নাম ও নাম্বার পরে দেব। স্টেশন থেকে বের হয়ে প্রথম কাজ হবে ব্রেকফাস্ট করে নেওয়া। এরপর চলে আসুন প্রথম দিনের প্রথম দর্শনীয় স্থান মা তারিনী মন্দিরের উদ্দেশ্যে, যা ঘাটগাঁওয়ে অবস্থিত, দূরত্ব প্রায় ৬০ কি.মি। ঘাটগাঁও পৌঁছে মা তারিনী মায়ের দর্শন করুন। এই মন্দিরের প্রাচীন ইতিহাস রয়েছে এবং এটি অসাধারণ কারুকাজে শোভিত।
এরপর গুন্ডিচাঘাঘি জলপ্রপাত দেখতে চলে যান, যা ঘাটগাঁও তারিণী মন্দির থেকে ২০ মিনিটের দূরত্বে। এই জলপ্রপাতকে অনেকে ‘ওড়িশার নায়াগ্রা’ বলেন। মুসালা নদীর ওপর অবস্থিত এই জলপ্রপাত ধাপে ধাপে জল পড়তে থাকে, যা সত্যিই মনোমুগ্ধকর।
এখন আসুন ভীমকুণ্ড। বর্ষা বাদে অন্য সময়ে এর আসল রূপ দেখতে পাওয়া যায় না। বর্ষায় এর সৌন্দর্য অতুলনীয়। কেওনঝড় থেকে ৬০ কিমি দূরে, এখানে পাণ্ডবদের কাল্পনিক উপস্থিতি আছে বলে মনে করা হয়।
এরপর সীতাবিঞ্জিতে আসুন। এটি একটি বড় পাথরের টিলা। স্থানীয়দের মতে, সীতামাতা বনবাসের সময় এই গুহায় ছিলেন। এখানে Fesco বা পাথরের ওপরে শিলালিপিও রয়েছে, যা দ্রুত নষ্ট হচ্ছে।
এরপর কানঝারি ড্যাম দেখতে চলে যান। চারদিকে পাহাড় দ্বারা ঘেরা এই ড্যামটি বর্ষাকালে সত্যিই দৃষ্টিনন্দন। এখানে কিছুটা সময় কাটানোর পর কেওনঝড়ের উদ্দেশ্যে রওনা দিন। এখান থেকে কেওনঝড়ের দুরত্ব প্রায় ২০ কি.মি। হোটেলে ফিরে গিয়ে বিশ্রাম নিন এবং রাতের খাবারের ব্যবস্থা করুন। এভাবেই আপনার প্রথম দিনের ইতি।
দ্বিতীয় দিন : দ্বিতীয় দিনের শুরুটা খুব সকালে করতে হবে, কারণ পুরো দিন ঘুরে রাতের বাস ধরে ফিরতে হবে। সকালে হোটেল থেকে ব্রেকফাস্ট করে দ্বিতীয় দিনের প্রথম গন্তব্যের দিকে রওনা দিন - সানা ঘাঘরা জলপ্রপাত। সানঘাঘরা নেচার ক্যাম্পের ভেতরে অবস্থিত। ৫০ টাকার পার্কিং ফি দিয়ে প্রবেশ করতে হবে। প্রথমেই একটি সুন্দর পার্ক পাবেন, যেখানে বোটিংয়ের ব্যবস্থা রয়েছে। এরপর কিছুটা সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামুন জলপ্রপাত দেখতে। বর্ষাকালে এটি সত্যিই অসাধারণ।
বড়াঘাঘরা ফলস ৫ কি.মি. দূরে। এখানে গিয়ে হেঁটে ছোট নদী পার করতে হবে। চারপাশে সবুজ বন, পাখির ডাক, এবং বড়াঘাঘরা জলপ্রপাতের কাছে গিয়েই দেখতে পাবেন এটি কেমন দেখাচ্ছে।
এখন গো নাসিকা মন্দিরে চলে যান। বৈতরনী নদীর উৎপত্তিস্থল এখানেই। এখান থেকে পরবর্তী গন্তব্য খণ্ডধর ফলস। এখানে পৌঁছাতে ১.৩০ ঘণ্টা সময় লাগবে। খণ্ডধরের জলপ্রপাত বর্ষার জলে পুষ্ট, যা সত্যিই দর্শনীয়।
এরপর হান্ডিভাঙা ফলস দেখতে যান। এটি খণ্ডধর থেকে ৩০ কিমি দূরে। এখানকার শান্ত নিরিবিলি জঙ্গলে জলপ্রপাতের সৌন্দর্য উপভোগ করুন। দুপুরের পর কেওনঝড় শহরের দিকে রওনা দিন। রাত ৭ টার পর কলকাতার বাবুঘাটের উদ্দেশ্যে নাইট বাসগুলো ছাড়বে।
তৃতীয় দিন : এটি তাদের জন্য যাদের হাতে অতিরিক্ত একদিন রয়েছে। এখানে বিভিন্ন উপায়ে সময় কাটানোর পরামর্শ রয়েছে:
এক: তৃতীয় দিনে বাসে সরাসরি বারবিল স্টেশনে চলে যান এবং দুপুর ১.৪০-এর জনশতাব্দী ধরে ফিরুন।
দুই: গাড়ি রিজার্ভ করে বারবিল স্টেশনে যান। রাস্তার পাশে মূর্গ মহাদেব ফলস দেখতে ভুলবেন না।
তিন: যে গাড়িতে দুদিন ঘুরেছিলেন, সেটি তৃতীয় দিন সারাদিনের জন্য বুক করে নিন এবং কেওনঝড় শহরের বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান দেখুন, যেমন: জগন্নাথ মন্দির, গিরিবান্ধা জলপ্রপাত, এবং কাদিপোসা ড্যাম। এরপর বারবিলের দিকে যান এবং মূর্গ মহাদেব ফলস ও মন্দির দেখে ফিরে আসুন কেওনঝড় শহরে।
অনলাইন সাচ্ছন্দ্য না বোধ করলে, আপনি অফলাইনে কাউন্টার থেকে টিকিট কাটতে পারেন। কলকাতা থেকে কেওনঝাড়ের অনেক বাস পাওয়া যায়। আগে থেকে কেওনঝাড় বাস যাত্রার টিকিট কেটে রাখুন।
কোথায় থাকবেন : কেওনঝড়ে OTDC পান্থনিবাস বেশ জনপ্রিয় হলেও, আমি এই জায়গাটিকে বেশি ওভাররেটেড মনে করি। কেওনঝড় শহরের হোটেলগুলোতে থাকা ভাল, যেখানে আপনি কম খরচে ভালো ব্যবস্থা পাবেন। প্রকৃতির মাঝে থাকতে চাইলে সানা ঘাঘরা নেচার ক্যাম্প একটি ভালো বিকল্প।
কেওনঝাড় টুরিস্টদের থাকার কিছু জন্য ভালো হোটেলের ফোন নম্বর
- Hotel Prince 9438191373
- Hotel New Mayur 6766251222
- Hotel Pritam Hilife 06766254809
- HOTEL INDIA 9437634870
কটুরিস্টদের অনলাইন বুকিংয়ের জন্য কিছু বিশ্বস্ত হোটেলের পরামর্শ দিলাম
হোটেলের নাম | বুকিং লিঙ্ক |
---|---|
MakeMyTrip | বুক করুন |
Goibibo | বুক করুন |
Yatra | বুক করুন |
Oyo Rooms | বুক করুন |
ওয়েব ক্যাব বাদেও পাবলিক ট্রান্সপোর্টে, গাড়ি রিজার্ভ জন্য ড্রাইভার
..............
Also visit |
link |
গোমিরা নাচ: পশ্চিমবঙ্গের ঐতিহ্যবাহী মুখোশধারী নৃত্য। |
|
এডভেঞ্চার টুরিজমের আদর্শ গন্তব্য- 'ঘোড়ামারা দ্বীপ'। |
আপনার আরও প্রশ্ন থাকলে আমাকে WhatsApp-এ মেসেজ পাঠান: WhatsApp লিঙ্ক
আপনার আরও প্রশ্ন থাকলে আমাকে SMS পাঠান: SMS লিঙ্ক
আপনার আরও প্রশ্ন থাকলে আমাকে ইমেইল পাঠান: spytokblog@gmail.com
0 মন্তব্যসমূহ